কিভাবে ভাল শ্রোতা হওয়া যায় বা ভাল শ্রোতা হওয়ার কৌশল

কিভাবে ভাল শ্রোতা হওয়া যায় বা ভাল শ্রোতা হওয়ার কৌশলঃ যোগাযোগ রক্ষায় ভাল শ্রোতা হওয়া খুবই জরুরী। কোন কিছু শোনা মানেই ভাল শ্রোতা হওয়া নয় বরং ভালো শ্রোতা অন্যের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করে এবং যা শুনে তা নিয়ে ভাবে।

আমাদের চারপাশে অনেক অনেকেই প্রচুর কথা বলে এবং অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে না বা খানিকটা শুনলেও তা ভাবনা-চিন্তার গভীরে নেয় না। এরা কোন ভাবেই ভাল শ্রোতা নয়।

ভাল শ্রোতা হওয়ার কৌশল

ভাল শ্রোতার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা থেকে বোঝা যায় যে, সে ভাল শ্রোতা। যেমনঃ-

 একজন ভাল শ্রোতা মনোযোগ দিয়ে বক্তার কথা শুনে, কখনই শোনার সময় অন্যমনস্ক হয়ে পড়বে না বা অন্য কিছু নিয়ে ভাববে না। সাধারণত বেশির ভাগ সময় বক্তার চোখে চোখ রেখে তার বক্তব্য শুনে।

ভাল শ্রোতা বক্তব্যের সাথে একান্ত হয়ে যায়; যা শুনছে সে অনুযায়ী তাঁর অভিব্যক্তি যেমন- হালকা হাসা, অবাক হওয়া, দুঃখের অভিব্যক্তি দেওয়া ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়।

একজন ভাল শ্রোতা অন্যের কথা বলার সময় নিজে কথা বলেনা সময় ও সুযোগ বুঝে অথবা অন্যের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে নিজে বক্তব্য করে বা কথা বলে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ভাল শ্রোতা সাধারণত কোন আলোচনা চলাকালে শতকরা আশি (৮০) ভাগ সময় শুনে এবং শতকরা বিশ (২০) ভাগ সময় কথা বলে; তবে তা ভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

একজন ভাল শ্রোতা কারো কথা বলতো পড়াশোনার সময় হঠাৎ কোনো অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে না; বরং যিনি ভালো শ্রোতা, তিনি বক্তার সাথে সময়ের সাথে সাথে যৌক্তিক ভাব বিনিময় গত বিশেষ ক্রিয়ার মাধ্যমে বক্তাকে বিষয় বস্তুর মধ্যে থাকতে সাহায্য করেন।

এখন ভেবে দেখতে পারেন যে আপনার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য গুলো আছে কিনা?  আমাদের সবার মধ্যেই  ভাল শ্রোতা হওয়ার গুণাবলী কম বেশি রয়েছে। যারা ঠিক ততটা ভালো শ্রোতা নয়, তাদের উচিত ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করা। কারণ কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য ভালো শ্রোতা হওয়া খুবই জরুরী। 
 

ভালো শ্রোতা হওয়ার নিয়ম

উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনাঃ একজন গুণী মানুষ যেমন উদ্দেশ্য পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ শুরু করে না তেমনি একজন ভালো শ্রোতা ও গঠনমূলক কোন উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কথায় কর্ণপাত করে না।

একজন ভালো শ্রোতা শোনার আগেই ঠিক করে নেই কি কি তথ্য তার প্রয়োজন এবং কিভাবে সেই সকল তথ্য সে মনে রাখবে। 

মনে রাখার জন্য একজন ভাল শ্রোতা বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকে; যেমন মুখ্য শব্দ মনে রাখার কৌশল এখানে রাখে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বিজ্ঞান হিসেবে তার সাথে একীভূত করে নেয়। 

তবে বেশি তথ্যের ক্ষেত্রে শ্রোতা সেগুলো কে কোথাও নোট করে বা টুকে রাখে। তবে শোনার আগে যদি উদ্দেশ্য ঠিক করে নেয়া যায় কিংবা কি কি তথ্য জানা প্রয়োজন তা ঠিক করে নেয়া যায় তবে শোনা তথ্য মনে রাখা সহজ হয়।

মনোনিবেশ করা: ভাল শ্রোতা হতে হলে তাহলে অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে  শুনতে হবে। কোন কিছু নির্বিঘ্নে মনোযোগ দিয়ে শোনো সহজ কোনো কাজ নয়;  এজন্য অনুশীলন ও চেষ্টার প্রয়োজন আছে।

অনেকেই কখনো কখনো অন্যের কথা বা বক্তব্যের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারেনা। অনেকে আবার খুব দ্রুত অন্যের বক্তব্যের গভীর মনোনিবেশ করতে পারে। এটার জন্য আসলে চেষ্টা ও  অনুশীলন প্রয়োজন। 

মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকা: ভাল শ্রোতা হতে হলে কোন কিছু শোনার সময় মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকতে হবে। কেউ যখন কথা বলে বা বক্তব্য প্রদান করে, তখন অনেকেই বিভিন্ন রকম কাজ করে, নানা রকম চিন্তাভাবনা করে। 

এমন করলে কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা যায় না; মনোযোগী শ্রোতাও  হওয়া যায় না। কাজেই মনোযোগী শ্রোতা হতে হলে কোন কিছু শোনার সময় অবশ্যই মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে, যাতে করে পূর্ণ মনোনিবেশ করা যায়। 

চোখে তাকিয়ে কথা বলা: আমাদের দেশে গুরু জনদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা অনেকেই অভদ্রতা মনে করে থাকেন। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই অনুমান করতে পারেন; বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে মানুষিক যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন । 

নিজের দিকে কথা না বলা: অন্য কেউ যখন কথা বলে,  তখন আমাদের কথা বলা উচিত না। কেউ কথা বলার সময় যদি আমরা কথা বলি তবে আমরা যেমন তার কথা ভালোভাবে শুনতে পাবো না; তেমনি তিনিও আমাদের কথা শুনতে পাবেন না।

উপরন্তু  এতে করে একটা গোলমেলে পরিবেশ তৈরি হয়।কাজেই মনোযোগী শ্রোতা হতে হলে অন্যরা যখন কথা বলবে তখন নিজে নিশ্চুপ থেকে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস করতে হবে। একজনের কথা বলা শেষ হলে তারপরে নিজে কথা বলতে হবে। 

 এ সকল উপায়ে আমরা যদি নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে তা আমাদের আচরণের অংশে পরিণত করি তবে আমরা ভাল শ্রোতা হয়ে উঠতে পারব। 

জীবনে বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে ভাল শ্রোতা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

Leave a Comment